শিরোনাম
জিএসএসনিউজ ডেস্ক : | ০৫:১৪ পিএম, ২০২০-১২-২৩
আবদুল গাফফার মাহমুদ : মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে উপকূলীয় চরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ওই বছরের ১ জুলাই প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয়। আগামী ২০২১ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবার কথা। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫৩৪.৩৭ লক্ষ টাকা।
এই প্রকল্পের শিরোনাম দেয়া হয়েছে উপকুলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। উপকূলীয় চরাঞ্চলে দরিদ্র পরিবারের পুষ্টি ও জীবন-যাত্রার মানোন্নয়নে প্রকল্পটি গৃহীত হয়েছে। নারীদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা এবং লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস করা ও এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ছাড়া মুরগি, হাঁস, ভেড়ার ক্ষুদ্র খামার স্থাপনের মাধ্যমে ডিম ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধিও লক্ষ্য। এই প্রকল্পে উপকূলীয় চরাঞ্চলের ৭টি জেলার ১৬টি উপজেলায় ৬৮টি ইউনিয়নের ৩৪,৪০৮টি দরিদ্র পরিবার সরাসরি উপকৃত হবে।
বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৭টি জেলা এই প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত। জেলাগুলো হচ্ছে কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরগুনা ও পটুয়াখালী। এই ৭টি জেলার ১৬টি উপজেলায় প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে মহেশখালী, কবিরহাট, লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর, রামগতি, সোনাগাজী, চরফ্যাশন, দৌলতখান, লালমোহন, বরগুনা সদর, বেতাগী, তালতলী, পাথরঘাটা, কলাপাড়া, গলাচিপা, রাঙ্গাবালি। এই উপজেলা গুলোর ৬৮টি ইউনিয়নে মোট সুফলভোগী হবে ৩৪,৪০৮ জন। এদের মধ্যে ১৭,০০০ জন ২০টি হাঁস ও একটি ঘর পাবে। ১০,২০০ জন ২০টি মুরগী ও একটি ঘর পাবে। এবং ৬,৮০০ জন ৩টি ভেড়া ও একটি ঘর পাবে। ২৫ জন সদস্য নিয়ে ১৩৬০টি গ্রুপ করা হবে এবং স্ব-স্ব বিষয়ে ৩দিন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। হাঁস ও মুরগি প্রাপ্ত সুফল ভোগীগণ ৬৫ দিন পর্যন্ত খাদ্য ফ্রি পাবে এবং ১ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা ভ্যাকসিন ও মেডিসিন ফ্রি পাবে। ভেড়াপ্রাপ্ত সুফলভোগীগণ ৮০ দিন পর্যন্ত খাদ্য ফ্রি পাবে এবং ১ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা ভ্যাকসিন ও মেডিসিন ফ্রি পাবে। প্রতি ইউনিয়নে ১জন করে ৬৮ জন কবুতর পালনকারী শুধু একদিনের প্রশিক্ষণ ও একটি করে কবুতরের ঘর পাবে। প্রত্যেক ইউনিয়নে ৫ জন করে মোট ৩৪০জন ঘাস চাষের জন্য ৭০০০ টাকা করে পাবে। ১৬টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে সুবিধামত জায়গায় একটি করে ঘাস বিক্রির শেড নির্মাণ করা হবে। শুরুতে ১টি জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে ১টি জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি উপজেলায় একদিনের ১টি করে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরভূক্ত “ উপকুলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প” বাংলাদেশের উপকূলীয় চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরী করেছে। প্রকল্পটিতে বরিশাল ও চট্টগ্রাম ভিাগের ১৬টি উপকূলীয় উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নে ৫০০ জন করে মোট ৩৪,০০০ জন সুফলভোগী রয়েছে। প্রত্যেক সুফলভোগী শুরুতে ৩দিনের মৌলিক প্রশিক্ষন শেষে ২০টি করে হাঁস বা ২০টি করে মুরগী বা ৩টি করে ভেড়া বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি বিনামূল্যে হাঁস, মুরগী ও ভেড়া রাখার জন্য শেড, খাদ্য, মেডিসিন, ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা সুবিধা পান। সরেজমিনে প্রকল্পভূক্ত এলাকাসমূহের অর্ন্তভুক্ত বিভিন্ন সুফলভোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা যায় অনেকেই ইতোমধ্যে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ২০টি করে হাঁস বা ২০টি করে মুরগী বা ৩টি করে ভেড়া, হাঁস, মুরগী ও ভেড়া রাখার জন্য শেড, খাদ্য, মেডিসিন ও ভ্যাকসিন উক্ত প্রকল্প থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মাধ্যমে পেয়েছেন। নেয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানসিড়ি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের নবগ্রামের সুফলভোগী শামসুন্নাহার বেগম ও তার স্বামী মো: ওয়ালিউল্লাহ বলেন, তারা অত্র প্রকল্প থেকে ৩ দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে প্রাপ্ত ২০টি মুরগী থেকে ১২০টি মুরগী উৎপাদন করেছেন এবং ৬০০টি ডিম বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ জগদানন্দ গ্রামের সুফলভাগী মর্জিনা বেগম বলেন, তিনিও অত্র প্রকল্প থেকে ৩দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ৩টি ভেড়া, শেড, খাদ্য, মেডিসিন ও ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পেয়েছেন। তার মোট ভেড়ার সংখ্যা এখন ৭টি। ফেনী জেলার সোনগাজী উপজেলার চর লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামের সুফলভোগী হোসনে আরা বেগম ৩টি ভেড়া থেকে ৭টি ভেড়া উৎপাদন করেছেন।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: বেনজীর আহমেদ জানান, বরগুনা সদর উপজেলা বদরখালি ইউনিয়নের বাওয়ালকোর গ্রামের মাজেদা বেগম ২০টি হাঁস থেকে ১১৭টি হাঁস উৎপাদন করেছেন। তিনি ৫০টি হাঁস বিক্রি করেছেন।
একইভাবে প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: হাবিবুর রহমান জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চরপাড়া গ্রামের জাফর খানের স্ত্রী রাহিমা ২০টি হাঁস থেকে ৫০টি হাঁস উৎপাদন করেছেন। তিনি ৩০০টির বেশি ডিম বিক্রি করেছেন।
অত্র প্রকল্পের ৩৪,০০০ সুফলভোগীর ৯০ শতাংশই নারী অর্থাৎ ৩০,৬০০ জনই নারী। তারা ঘরে বসে হাঁস, মুরগী ভেড়া পালন করে পরিবারে উন্নতি তথা গ্রামীন অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে ব্যাপক ভ’মিকা পালন করছেন। অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়ন, চরঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বেকারত্ব মোচন ও গুণগত পুষ্টির চাহিদা পুরণ করে মেধাবী জনগোষ্ঠী গঠনে প্রকল্পটি গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে চলেছে।
বিগত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বালাদেশের জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ছিল প্রায় ১.৫৩ ভাগ। কিন্তু কোভিড ১৯ পরিস্থিতিতে অন্যান্য খাতের মতে এ শিল্পটিও কিছুটা হোচট খেয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ অনুসারে বালাদেশের বেকারত্বের হার ৪.১৯ শতাংশ। কেভিড ১৯ প্রাদুর্ভাবকালীন দেশে প্রায় ৫৩.৬৪ মিলিয়ন মানুষ বেকার হয়েছেন যাদের প্রতিদিনের আয় মাত্র ১৬০ টাকা বা ১.৯ ডলার। গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত গড় পারিবারিক আয় কমেছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। এ অস্বস্তিকর পরিস্থিেিত গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী, টার্কি, ভেড়া, শুকর, কবুতর পালন বেকার জনসম্পদকে আলোর পথ দেখাতে পারে। বাংলাদেশে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন মাংস দরকার ১২০ গ্রাম, দুধ দরকার ২৫০ মিলি গ্রাম। এমন প্রেক্ষাপটে দুধ, ডিম তথা পুষ্টির চাহিদা পুরণ, বেকারত্ব মোচন ও উপকূলীয় চরাঞ্চলের অবহেলিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে “উপকুলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’টি ব্যাপক ভ’মিকা পালন করছে।
অত্র প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা: এস.এম. জিয়াউল হক রাহাত জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ও রুপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সমাজের বঞ্চিত ও অবহেলিত অংশ বিশেষ করে উপকুলীয় চরাঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে অর্থনীতির মূলস্রোতে অন্তর্ভূক্ত করার কোন বিকল্প নেই। এ প্রকল্পটি সরাসরি উপকুলীয় চরাঞ্চলের মানুষকে প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে ২০টি করে হাঁস বা ২০টি করে মুরগী, বা ৩টি করে ভেড়া, হাঁস, মুরগী ও ভেড়া রাখার জন্য শেড, খাদ্য মেডিসিন ও ভ্যাকসিন বিতরণ করে সবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুফলভোগীগন অত্র প্রকল্পের জন্য একদিকে যেমন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এ্যাডভোকেট শ.ম. রেজাউল করিম এমপি, সচিব রওনক মাহমুদ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা: আব্দুল জব্বার শিকদার এর কাছে প্রকল্প এলাকা বৃদ্ধির জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
জিএসএসনিউজ ডেস্ক : : নুর আমিনা : স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'র ১০৪ তম জন্ম বার্...বিস্তারিত
জিএসএসনিউজ ডেস্ক : : মো: শরিফ ভূইয়া,রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, আওয়ামীলীগ, র...বিস্তারিত
জিএসএসনিউজ ডেস্ক : : বেলাল উদ্দিন আহম্মদ: কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল জনকল্যাণ ফোরামের উদ্যোগে ২৪ জন মেধাব...বিস্তারিত
জিএসএসনিউজ ডেস্ক : : শাহ আলম শফি : চট্টগ্রাম বিভাগে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্স শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করায় বরুড়...বিস্তারিত
জিএসএসনিউজ ডেস্ক : : মো.শামীম আক্তার,রায়গঞ্জ(সিরাজগঞ্জ): স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি ভোক্তার স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্...বিস্তারিত
জিএসএসনিউজ ডেস্ক : : শরীফ ভূইয়া,রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রূপগঞ্জ ইউনিয়নে &...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2024 gssnews 24 | Developed By Muktodhara Technology Limited